বিশ্বকর্মা ও বর্ণাশ্রম
জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়
Published on : 9/17/2021 1:21:00 PM
হিন্দুরা অতি বজ্জাত। ব্রাহ্মণরা বর্ণাশ্রমের মাধ্যমে অন্যদের যা অপমান, অসম্মান করে তা কহতব্য নয়। এমনকি সমাজে শূদ্রদের কোনও স্বীকৃতি নেই!
কিন্তু এই ব্রাহ্মণ্যবাদের ধারক-বাহকরাই আবার বেশ্যার ছেলে, শূদ্রের ছেলে সত্যকাম, ঐলুষ কবষকে বেদের মন্ত্রদ্রষ্টা, ব্রাহ্মণ, ব্রাহ্মজ্ঞানী বলেছে, ঘোষের ব্যাটাকে বিষ্ণু বানিয়ে ছেড়েছে! আর নিখাদ ব্রাহ্মণের ব্যাটাকে ক্ষত্রিয় বানিয়ে দিয়েছে! তো সেসব আখ্যান পরে হবে, আজ বিশ্বকর্মাপূজা, আজ আসি বিশ্বকর্মা বিষয়ে।
ব্রাহ্মণ শূদ্রের ছোঁয়া খাওয়া তো দূর অস্ত, ছুঁলেও স্নান করে! আর শূদ্র বা বৈশ্যকে প্রণাম? নৈব নৈব চ। অথচ এই বিশ্বকর্মা বৈশ্য মতান্তরে শূদ্র। ব্রাহ্মণ তো ননই, নিদেনপক্ষে ক্ষত্রিয়ও নন। ঋকবেদ অনুসারে বিশ্বকর্মা বিশ্বব্যাপী সমস্ত দেখেন, জানেন, করেন। একমাত্র শ্রমিকসম্প্রদায়, সাংবাদিক, চিকিৎসক থেকে কারখানার শ্রমিক অথবা গৃহভৃত্য সবথেকে বেশি দেখেন, জানেন, এবং সমস্ত কর্ম সম্পাদন করেন। সবথেকে বেশি সহ্য করেন বলেই এঁরা শূদ্র। যাবতীয় অর্থনীতি এঁদের কর্মকাণ্ড নির্ভর বলেই এঁরা বৈশ্য। এঁদের এই আহরিত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেশ চালান রাজনৈতিক ব্যক্তিগণ (ক্ষত্রিয়)। আর এই তথ্যসমীক্ষা, জ্ঞান থেকেই বিজ্ঞানী, চিন্তাবিদ প্রমুখ (ব্রাহ্মণ) সমাজকে আরও এগিয়ে নিয়ে যান।
ঋকবেদ, পুরাণ এবং বিশ্বকর্মার ধ্যান ও প্রণাম মন্ত্রের অন্তর্নিহিত অর্থ থেকে সুস্পষ্ট বিশ্বকর্মা একা একজনমাত্র দেবতা নন, বিশ্বকর্মা সকল শ্রমজীবী মানুষের সম্প্রদায়ের প্রতিভূ। আর সেই শূদ্র অথবা বৈশ্য প্রতিভূর পূজা করেন ব্রাহ্মণ পুরোহিত! প্রসাদ খান, প্রণামও করেন।
আসলে ভারতীয় দর্শন কর্মীর স্বীকৃতি দিয়েছে, কর্মের স্বীকৃতি দিয়েছে। গুণকে করেছে মহৎ। বিশ্বকর্মার বিপুল কর্মকাণ্ড যা না হলে পৃথিবী অচল সেই শ্রমকে মহত্বের আসনে বসিয়ে শ্রমজীবী সম্প্রদায়ের প্রতীক বিশ্বকর্মাকে বসিয়েছে পূজার আসনে। আর সেজন্যই ব্রহ্মজ্ঞানী ব্রাহ্মণের সংকোচ হয় নি বিশ্বকর্মাকে পূজা করতে, প্রণাম করতে।
আজ পশ্চিম বলছে কর্মীদের আনন্দে রাখতে, তাঁদের জন্য মাঝেমাঝেই উৎসব-অনুষ্ঠানের আয়োজন রাখতে। ভারত সেই কবে থেকেই এসব প্রয়োগ করে এসেছে বলেই শত শত বৈদেশিক লুঠেরাও চূড়ান্ত লুন্ঠনের পরেও ভারতের ভাণ্ডার নিঃশেষ করতে পারে নি। আর এসব ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা পার্বণ "জিডিপি"-র সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে কতটা কার্যকরী তা অর্থনীতির নব্য ছাত্রও বুঝবে!
আসুন বিশ্বকর্মার প্রতি, বিশ্বের সকল শ্রমজীবী সম্প্রদায়ের প্রতি আজ এই দিনে শ্রদ্ধাশীল হয়ে প্রণাম জানাই।